1. kabir28journal@yahoo.com : Abubakar Siddik : Abubakar Siddik
  2. kabir.news@gmail.com : Kabir :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

তিন সেন প্রজন্ম বিধিনিষেধ ভেঙে বিকিনিতে

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৯৪ ০০০ জন পড়েছে।

 জনজীবন বিনোদন—
 
 
তিন সেন প্রজন্ম বিধিনিষেধ ভেঙে বিকিনিতে
সুচিত্রা মুনমুন রাইমা রিয়া
তিনি ভারতের “গ্রেটা গার্বো” বলে বিখ্যাত।কিন্তু হলিউডের এই কিংবদন্তির সঙ্গে সুচিত্রার তুলনাটা নিছকই অভিনয়ের নিরিখে নয়।বোধহয় তার চেয়ে অনেক বেশি তুলনাটা আসে,গ্ল্যামারের জন্য।বাংলা সিনেমায় নির্দ্বধায় সুচিত্রা সেই গ্ল্যামারের প্রথম এবং শেষ কথা।কখনও চিলতে আর কখনও প্রাণখোলা হাসির ঝলকে,তিনি ঝড় তুলেছেন দর্শক মনে।গ্রীবার বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তিনি হার মানিয়েছেন রাজহংসীকে।কিন্তু গ্ল্যামার তো শুধু মুখে থেমে থাকে না।সুচিত্রা জানতেন সেকথা।তাই তিনি সমস্ত শরীরকেই গ্ল্যামারের ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করতেন।
সিনেমার পর্দাকে প্রায়শই আটকে থাকতে হয় সামাজিক কিছু ট্যাবুর গন্ডিতে।কিন্তু একজন গ্ল্যামারাস অভিনেত্রীর সমস্ত সত্তা বা উপস্থিতিটাই তো সিনেমার পর্দায় আটকে থাকতে পারে না।তার বাইরেও স্টিল ক্যামেরার সামনে তাঁকে নিজের গ্ল্যামারের নিদর্শন রাখতে হয়।ভবিষ্যতের অভিনেত্রীদের এই পথ দেখান মিসেস সেনই।
পাঁচের দশকে সুচিত্রা সেনের পথচলা শুরু।হলিউডের ফ্যাশন বলতে তখন গ্রেস কেলির ধ্রুপদী গাউন,স্কার্ট, সুট আর মেরিলিন মনরোর সাহসী ব্লন্ড উপস্থিতি।ভারতে মধুবালা,মীনাকুমারী,বৈজয়ন্তীমালা,নার্গিসরা তখন ট্রেন্ড সেটার।মধুবালা প্রথমবার পরছেন ডিপকাট ব্লাউজ,ছবি তুলছেন অফ শোল্ডার গাউন পরে।মীনাকুমারী হালকা সুতির শাড়ির সঙ্গে বড় টিপ পরাটা ফ্যাশনে পরিণত করেছেন।
তখন বাংলার স্ক্রিনে সুচিত্রা সেন স্নিগ্ধ রূপ ধরলেন,সাধারণ শাড়ি, ছোট্ট টিপে।’সাড়ে চুয়াত্তরে’ নকশা করা প্যারাসল(ছাতা) নিয়ে অন্যরকম একটা লুকও আনলেন।
সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে নতুন চুল বাঁধার কায়দাও থাকল কিছু।কিন্তু সামগ্রিক ভাবে ,এক ধরনের টাইপ থেকে বাংলা সিনেমা বেরতে পারল না।সুচিত্রার ইমেজও সেই স্টিরিও টাইপ থেকে বেরতে পারল না।মোদ্দাকথা,’সাড়ে চুয়াত্তর’ ফ্যশনের দিকে নতুন কিছুই দেখাতে পারল না।সুচিত্রা ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু এই বাঁধন ভাঙার জন্য তৈরি ছিলেন।পরবর্তীকালে বিভিন্ন ফটোশুটে তিনি নিজেকে তুলে ধরলেন নানা পোশাকে।ভাঙলেন তথাকথিত টাইপগুলো।
বৈজয়ন্তীমালা-খ্যাত জর্জেট, সিল্ক,নেটের শাড়িতে সেই সব ফোটোশুটে তিনি একাধারে আধুনিক তথা ক্লাসিক একটা লুক আনলেন।তাঁর ব্লাউজের বৈচিত্র্যও দেখার মতো।কোনওটার থ্রি-কোয়াটার হাতা,কোনোওটার উঁচু, শার্ট কলার,কোনওটা বা খুব সাহসী লো-কাট,স্লিভলেস।ফিল্মি পার্টিগুলিতে একধরনের সাহসী-শাড়ি ব্লাউজেই তাঁকে দেখা যেত।
এমনকি,মেয়ে মুনমুনের বিয়েতেও মোটেই গ্ল্যামার ছেড়ে মা-মাসীদের মতো গরদ ধরেননি সুচিত্রা।সেদিনও তাঁর পরনে গভীর-গলা ব্লাউজ,ঝকঝকে দামি শাড়ি।কোনও দিন সুচিত্রা শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করাতেন লম্বা ফ্যাশনেবল ড্যাঙ্গালারস,কোনওদিন স্লিক মুক্তোর গয়না।শোনা যায় ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি নাকি লম্বা-ঝোলা দুল পরতে পছন্দ করতেন।
মেকআপের দিক দিয়েও তাঁর কিছু নিজস্ব সংযোজন থাকত।প্রথম দিকে সরু করে ভুরু আঁকলেও,পরের দিকে বেশ মোটা করেই আঁকতেন ভুরু দুটি।
পাঁচের দশকের ‘বোল্ড’ আই মেকআপ তাঁর বিখ্যাত চোখদুটিকে করে তুলেছিল মোহময়ী।ঐ চোখের চাহনিতেই কাত হয়েছিলেন আসমুদ্রহিমাচল!এছাড়াও একটু চড়া মেকআপ পছন্দ করতেন তিনি।কিন্তু জানতেন,কোথায় গিয়ে থামতে হবে।গ্ল্যামারাস অভিনেত্রীর একটা ক্যানডিড,মেকআপ-বিহীন সত্তাও থাকা প্রয়োজন।তারও যে একটা আবেদন আছে,সুচিত্রা সেটা জানতেন।
তাই কখনও ঘরোয়া শাড়ি পরে,হালকা বেশে,পুজোর সাজে সুচিত্রা হয়ে উঠলেন অনন্যা।আর অবাঙালি পোশাক?সুচিত্রা বিভিন্ন স্টাইলের ঘাগরা ও সালোয়ার সুট পরে দেখা দিলেন।
আনারকলি সুট,যা ‘পাকীজা’ বা ‘মুঘল-এ-আজম’-এ বিখ্যাত হয়েছিল, সেই ‘বাইজি-পোশাক’ পরেও সাবলীলভাবেই ধরা পরলেন লেন্সে।নিজের কিছু সিনেমাতেও এই পোশাক ব্যবহার করেছিলেন তিনি।সুচিত্রার ছবি অসাধারণ হয়ে উঠেছে মণিপুরী এবং কাশ্মীরি পোশাকেও।সম্ভবত,এর ভিতরে বোধহয় কোথাও যেন একটা খুব সচেতন প্রয়াস ছিল, নিজের সৌন্দর্যকে শুধুই ‘বাঙালি’ থেকে ‘সর্বভারতীয়’ করে তোলার।
ছয়ের দশকে পোশাকের জগতে ঘটে গেল এক বিপ্লব।ফ্যাশনে এল মিনি স্কার্ট।আগেকার বোরিং গোড়ালি ছোঁওয়া স্কার্ট এখন হয়ে উঠল তিনটি দৈর্ঘ্যের-লং,মিডি আর মিনি।
হলিউডে এসময় অড্রে হেপবার্ন ঝড় তুললেন পরদায় প্রথমবার LBD(Little Black Dress) পরে।সেই ঝড় আছড়ে পড়ল হুগলি পারেও।বাংলা সিনেমার স্ক্রিনেও হয়ে গেল আর একটা বিপ্লব।’সপ্তপদী’তে সুচিত্রা অভিনীত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ‘রিনা ব্রাউন’-এর চরিত্রটি যেরকম ফ্রক,টপ,স্কার্ট পরল,যেমন করে চুল বাঁধল,সিঁথি কাটল,তার সবটুকুই হয়ে উঠল ফ্যাশন।
সুচিত্রাকে পরদায় শাড়ির জায়গায় স্কার্ট পরতে দেখে, বাঙালি শক্ড হল হয়তো কিছুটা, কিন্তু মোহিত হলৈ তার চেয়ে অনেক বেশি!কল্পনার জগতে পাকাপাকি আসন পাতলেন সাহসী ‘রিনা’রূপী সুচিত্রা।
পরদায় ছাড়পত্র পাওয়া মাত্রই ফোটোশুটেও ঢুকে পড়ল সাহসী পোশাক।তাঁর পরনে তখন বিভিন্ন লেংথের স্কার্ট, গাউন,জাম্পসুট এমনকি পায়ের পাশের অংশ থেকে হাঁটু অবধি কাটা যে পোশাককে ইংরেজিতে ‘স্লিট ড্রেস’ বলে,তা-ও।
পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে, জুতো নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করেছেন তিনি।নানা ধরনের হাই হিলস,স্লিপার তাঁর সংগ্রহে ছিল।ছয়ের দশকে চালু ওভারসাইজড সানগ্লাস, কিটেন টুপিও পরতেন।এসব অ্যাকসেসারিজের নিত্যনতুন ব্যবহার দিয়েই যেন,সুচিত্রা সমকালীন অন্য বাঙালি অভিনেত্রীদের এক লহমায় অনেক পিছনে ফেলে দিলেন!আসলে বাকিদের চেয়ে তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছিল তাঁর সাহসীকতা।
আজও যেখানে হট প্যান্টস পরে রাস্তায় বেরনোর আগে মেয়েরা দুবার ভাবে, সেখানে সুচিত্রা কিন্তু সেই যুগেই একটু লম্বা টপের সঙ্গে হট প্যান্টস পরে চমকে দিয়েছিলেন!
আটপৌরে ইমেজ ছেড়ে প্রিন্টেড হাউজ কোট,কাশ্মীরি কাজের কাফতান পরেছেন এবং অবলীলায় ছবিও তুলেছেন।’স্কিন শো’-এর ক্ষেত্রে সুচিত্রা যে সাহসী তা দেখালেন, আজও কোনো বাঙালি অভিনেত্রী দেখাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।অন্তর্বাস ছাড়াই, ক্রুশের কাজ করা একটি টপের সঙ্গেও সুচিত্রা স্ক্রিনে ধরা পড়লেন।টপের সঙ্গে লম্বা স্লিট-ওয়ালা স্কার্ট পরেছিলেন।টপটিতে মাত্র একটি বোতাম।সকলকে চমকে দিল স্বপ্ন-সম্রাজ্ঞীর খোলা পেট আর উরু।
এখানেই শেষ নয়,মনরোকে মনে করিয়ে সুচিত্রা ফটোশুট করেছেন সুইমসুট পরে।মনে রাখবেন, সুচিত্রা যখন এই আপাত ‘নিষিদ্ধ’ কাজগুলি করছেন, তখন কিন্তু এখনকার মতো টোনড ফিগারের যুগ নয়।বরং ভরাট শরীরই তখন ‘ইন’।সুচিত্রাও ‘কার্ভস’ দেখাতে পিছপা হননি।শুধু সুইমসুট নয়,নায়িকার সমুদ্র স্নানের যে ছবি উঠল,তাতে নায়িকাকে দেখা গেল তোয়ালে পরিহিত অবস্থায়।দেখা গেল তাঁর নগ্ন পিঠ।
হয়তো এই গুণগুলিই স্টার আর সুপারস্টারের মধ্যে তফাত তৈরি করে দেয়।কোথাও যেন ছোঁয়ার ঠিক বাইরে থাকেন তিনি।দেবী যেন ভক্তকে সবটুকু দিয়েও দেন না!
 
 
 
 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরো সংবাদ