এ মেলার সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে সন্যাসী পূজাকে ঘিরে চার- পাঁচশ বছরেরও আগে এ মেলার উৎপত্তি হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে সন্যাসতলীর এ ঘুড়ির মেলায় আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ
আসেন। এ দিন সনাতন ধর্মের লোকজন মন্দিরে সন্যাসীকে পূজা দিয়ে দিনটি উৎযাপন করলেও এটি মুলত হিন্দু মুসলমানের মিলন মেলা।
মেলায় প্রবেশ করলেই প্রথমে নজরে পড়বে তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে অনেকের হাতে নাটাই ও কারো কাছে ঘুড়ি। চেষ্টা চলছে কার ঘুড়ি কত উপরে উঠতে পারে। আর বিভিন্ন ধরণের রঙ বেরঙের ঘুড়ি দেখিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা। ঘুড়ি ছাড়াও গ্রামীন তৈজষপত্র ও সংসারের কাজের জিনিষপত্র, মিঠাই- মিষ্টান্ত দেখতে মেলায় ঢল নামে সব বয়সী মানুষের। সেই সেই সাথে মেলাকে ঘির আশপাশের গ্রামগুলোতে ধুম পড়ে যাঢ উৎসবের। মেলায় নজর কেড়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দর্শনার্থীদের।
মেলার পাশে আমিড়া গ্রামের গোলাম রব্বানী বলেন,মেলার বয়স তার জানা নাই। বাপ দাদার সাথে তিনি মেলায় আসতেন। এখন তার বয়স ৭০ বছর পার হয়েছে। এবারও তিনি মেলায় এসেছেন। এসময় তিনি আবেগ কন্ঠে বলেন,
মাঠ জুড়ে এসব ঘুরি ওড়ানো হয়। ঘুরি আর লাটাই কিনতে দোকানে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মেলাকে ঘিরে স্বজনদের আপ্যায়ন চলে মেলা সংলগ্ন আশপাশের গ্রামগুলোতে।
রং বেরংয়ের ঘুড়ি মেলার মূল আকর্ষণ হলেও মেলায় মিঠাই-মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির হাড়ি পাতিল, হাতপাখা, লোহার জিনিষপত্র ও শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাগরদোলা নজর কেড়েছে মানুষের।
জিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী মেলা উপলক্ষে মেয়ে জামাই এবং স্বজনদের আপ্যায়ন চলে কয়েক গ্রামেজুড়ে। আর মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সকল ধর্মের মানুষের।
বগুড়ার ঘোড়াধাপ গ্রামের ঘুড়ি বিক্রেতা আব্দুর রশিদ বলেন, তিসি পঞ্চাশ বছর ধরে প্রতি বছর জৈষ্ঠ্যমাসের শেষ শুক্রবারে সন্যাসতলী মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে এসেছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুড়িরও প্রকার বদলে গেছে। ঘুড়ি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা রঙের ঘুড়ি ও নাটাই মেলায় এনে বিক্রি করছেন। একটি ঘুড়ি পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকাতে বিক্রি করছেন। এবছর মেলার দিন আবহাওয়া ভাল থাকাতে বেচাকেনা ভাল হওয়াতে খুশি তিনি।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফান নিশায বলেন, আমার দাদার বাড়ি আক্কেলপুরে। এখন আমরা বগুড়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। আমি শুনেছি সন্যাসতলীতে ঘুড়ির মেলা বসে কখনও যাওয়া হয়নি। আজ বাপ্পির সাথে মেলায় এসে হরেক রকমের ঘুড়ি দেখলাম। হাজার হাজার মানুষ তাদের পছন্দমত ঘুড়ি কেনার আগে ঘুড়ি উড়িয়ে দেখে কিনছেন। আমিও একটি ঘুড়ি ও সুতাসহ নাটাই কিনলাম। মেলায় এসে খুব ভাল লেগেছে।
সন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি শাজাহান আলী ভুট্রু বলেন,
প্রতি বছরের মত এবারেও সন্যাসতলী মেলা বসেছে। প্রায় চারশ বছরের অধিক পুরাতন এ মেলায় আমরা হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে পরিচালনা করি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতা বিক্রেতা, ব্যবসায়ীসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গন ও আশে পাশের গ্রামে উৎসবে মেতে উঠেন।
মেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকাই শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
Leave a Reply