1. kabir28journal@yahoo.com : Abubakar Siddik : Abubakar Siddik
  2. kabir.news@gmail.com : Kabir :
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ: অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম স্বাধীন সুলতান

সাংবাদিকের নাম:
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪
  • ৬৮ ০০০ জন পড়েছে।

জনজীবন ডেস্ক—–

ভারতবর্ষে তখন দিল্লি সালতানাতের শাসন চলমান। মুহাম্মদ বিন তুঘলক আসীন আছেন দিল্লির রাজসিংহাসনে। রাজ্যের মন্ত্রীদের মধ্যে মুহাম্মদের চাচাতো ভাই ফিরোজ-বিন-রজব বিশেষ প্রভাব ও প্রতিপত্তি বজায় রেখেছিলেন। আলী মুবারক নামে ফিরোজের এক বিশ্বস্ত কর্মচারী একদিন এক নওজোয়ানকে নিয়ে হাজির হলেন রাজদরবারে, করলেন ওই নওজোয়ানের চাকরি মিনতি। নওজোয়ানের নাম ছিল ইলিয়াস, তার মা ছিলেন আলী মুবারকের ধাইমা। আলী মুবারকের উপর বিশ্বাস রেখে ইলিয়াসকে চাকরিতে নিযুক্ত করলেন ফিরোজ।

সময় গড়িয়ে যেতে থাকল। এমন সময় এক ভজকট পাকালেন ইলিয়াস। ফিরোজের এক উপপত্নীর সাথে গভীর প্রেমে মশগুল হয়ে গেলেন তিনি। সেই ঘটনা ফিরোজের কানে পৌঁছানোর পর তিনি ইলিয়াসের জামিনদার আলী মুবারককে নির্দেশ দেন বিশ্বাসঘাতক ইলিয়াসকে পাকরাও করার জন্য। কিন্তু ইলিয়াস এই বিপদের আঁচ আগে থেকেই টের পাওয়ায় মাকে নিয়ে দিল্লি থেকে পালালেন।

দিল্লি সালতানাত;

ইলিয়াস আলী মুবারকের হাতছাড়া হওয়ায় মুবারকের উপর বেজায় চটলেন ফিরোজ। তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। ঘোর অপমানের শিকার হয়ে নতুন জীবিকার সন্ধানে দিল্লি ছেড়ে লখনৌতি এলেন আলী মুবারক। সৎ, নিষ্ঠাবান, ও পরিশ্রমী আলী মুবারক লখনৌতির তৎকালীন প্রশাসক কদর খানের নজরে এলে তিনি আলী মুবারককে সেনাবাহিনীর কোষাগার নিয়োগ দেন। একাগ্রতার সাথে সফলভাবে নিজ কাজ ঠিকঠাকমতো করায় তার সুনাম চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। তা কানে গেলো ইলিয়াসেরও। আবারও তিনি এক চাকরির আর্জি করে আসলেন আলী মুবারকের নিকট।

পূর্ব কর্মকাণ্ডের জের ধরে আলী মুবারক ইলিয়াসের উপর রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। হাতের নাগালে পেয়ে বন্দি করলেন ইলিয়াসকে। নিজ মা এবং ধাইমার (ইলিয়াসের মা) অনুরোধে মন গলে আলী মুবারকের। তিনি ইলিয়াসকে ক্ষমা করে দিয়ে সপ্তগ্রামে আজম-উল-মুলকের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বুদ্ধিকৌশলে পটু ইলিয়াস নিজ গুণেই দুই বছর পর সেনাপতি পদে উন্নীত হলেন।

কদর খানের মৃত্যুর পর ফখরউদ্দিন মুখলিস নামে এক ব্যক্তিকে লখনৌতির প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। আলী মুবারক আইনের এই লঙ্ঘন মেনে নিতে পারেননি বলে মুখলিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ওই যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন মুখলিস। ফিরোজাবাদ (পাণ্ডুয়া) এবং লখনৌতির বাসিন্দারা আলী মুবারককে মেনে নেন তাদের অস্থায়ী শাসক হিসেবে। আলী মুবারককে তখন লখনৌতির শাসক হতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ইলিয়াস। কিন্তু নিয়মনিষ্ঠ আলী মুবারক তাতে সায় দেননি।

পাণ্ডুয়ার মসজিদ। এখানে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন ইলিয়াস শাহ;

সপ্তগ্রামে আজম-উল-মুলকের মৃত্যুর পর আলাউদ্দিন আলী শাহ এবং ফখরউদ্দিনের দেখানো পথে হাঁটেন ইলিয়াস। তিনি নিজেকে স্বাধীন শাসক হিসেবে ঘোষণা করেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষার মোহে অন্ধ হয়ে মানুষ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। ক্ষমতার লোভে পরোপকারী বন্ধু আলাউদ্দিন আলীর সাথে যুদ্ধ শুরু করেন তিনি। সেই যুদ্ধে যেভাবেই হোক আলাউদ্দিন আলীর দেহরক্ষীদের হাত করে ফেলেন ইলিয়াস। ফলে নিজ দেহরক্ষীদের হাতেই খুন হন আলাউদ্দিন আলী। ইলিয়াস শাহ তখন হয়ে যান ‘শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ’। বসেন লখনৌতি-সপ্তগ্রামের গদিতে। ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন ১৩৪২ সাল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চোখে ইলিয়াস শাহ;

পুরনো প্রথার খোলস ভেঙে প্রশাসনে কিছু পরিবর্তন সাধন করেন ইলিয়াস শাহ। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিগত শত বছরে মুসলিম শাসকেরা তাদের যুদ্ধবাহিনী সাজিয়েছেন ঘোড়ার উপর ভিত্তি করে। নিয়োগপ্রাপ্ত ঘোড়সওয়াররা সকলেই ছিলেন মুসলিম। এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসেন ইলিয়াস। তিনি প্রশাসনিক কাজকর্মে অনেক হিন্দু ব্যক্তিকে নিযুক্ত করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতেও প্রচুর পরিমাণে হিন্দু লোকের সমাগম ঘটালেন। বাঙালী সেনাদের নিয়ে বৃহদাকারের পদাতিক সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন তিনি। বাঙালী মাঝিমাল্লা সহযোগে গড়ে উঠল বিশাল নৌবহর, শুধুমাত্র ফখরউদ্দিনের হামলা ঠেকানোর জন্য।

ইলিয়াস শাহের যুদ্ধবাহিনীর ঘোড়সওয়ার;

দুই বছরে সামরিক শক্তি বহুগুণে বাড়িয়ে সপ্তগ্রাম থেকে উড়িষ্যার দিকে পা বাড়ালেন তিনি। ওই আক্রমণ সামলাতে ব্যর্থ হলেন উড়িষ্যার সম্রাট নরসিংহ দেব এবং তার ছেলে ভানুদেব। একে একে জয়পুর, কটক, চিল্কা হ্রদ জয়ের পর ক্লান্ত হয়ে পড়লেন ইলিয়াস শাহ। তিনি ভাবলেন, অনেক হয়েছে, এবার রণে ক্ষান্ত দেওয়া যাক। লুটকৃত ধনদৌলত, হাতি-ঘোড়া নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে গেলেন তিনি। তবে কথায় আছে, উড়ে যায় পাখি, রেখে যায় পালক। ইলিয়াস শাহের মাধ্যমেই উড়িষ্যার উপর বাংলার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বীজ বপন করা হয়।

নরসিংহ দেবের মূর্তি;

সফল হওয়া উড়িষ্যা অভিযানের ফলে আত্মপ্রত্যয়ে বলিয়ান হয়ে ওঠেন ইলিয়াস। এবার তিনি মনোনিবেশ করেন উত্তর সীমান্তের পার্বত্য দেশগুলোর দিকে। শতবর্ষ পূর্বে ইখতিয়ার উদ্দিন তিব্বত অভিযানে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সে চিন্তা মাথায় গেঁথেই ১৩৫০ সালে নিজ সেনাবাহিনী নিয়ে নেপালের দিকে এগোলেন তিনি। আগে নেপালি সৈন্যরা তাদের স্বতন্ত্র রণকৌশল আর অসম সাহসের বলে বখতিয়ার খলজির বাহিনীকে পরাস্ত করলেও, আটকাতে পারেনি ইলিয়াসের বাহিনীকে। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় অচেনা গিরিপথে নেপালি সেনাদের বীরত্বের সাথে হারান ইলিয়াস শাহ।

বখতিয়ার খলজি;

আসা-যাওয়ার সময় ব্যাপক লুটতরাজ চালান তিনি, কাঠমান্ডুতে গিয়ে ধ্বংস করেন পশুপতিনাথের মন্দির। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখা কষ্টকর হবে বলে তিনি সুযোগমতো সেই স্থান ত্যাগ করেন। ১৩৫১ সালে সিন্ধু অভিযানে গিয়ে দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক উদরাময়ের কবলে পড়লেন। এই উদরাময়ই প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তার। যেহেতু মুহাম্মদ বিন তুঘলক সিংহাসনে বসার মতো কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যেতে পারেননি, তাই দিল্লির সভাসদেরা অনেক শলা-পরামর্শের পর তার চাচাতো ভাই ফিরোজ-বিন-রজবকে সিংহাসনে বসান।

মুহাম্মদ বিন তুঘলক;

দিল্লির ক্ষমতাকেন্দ্রের পালে পরিবর্তনের হাওয়ায় লাগায় ব্যাপক ঝামেলায় পড়েন ইলিয়াস শাহ। কারণ, তিনিই সেই ফিরোজ, যিনি একসময় ইলিয়াসকে পাকরাও করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফিরোজ শাহ পূর্বের সেই বেইমানীর প্রতিশোধ নিবেন বলে ঠিক করলেন। তবে, মাথার উপর রাজ্য শাসনের ক্ষমতাভার থাকায় তিনি এবার পালালেন না, ভাবলেন আক্রমণের মাধ্যমেই মোক্ষম জবাব দিবেন ফিরোজকে। পুত্র সিকান্দরকে রাজধানীর দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে, তিনি বিশাল ফৌজ নিয়ে ১৩৫১ সালে দিল্লির দিকে রওয়ানা হন।

ফিরোজ শাহ;

শুরুতেই রাজা শক্তি সিংহ এবং কামেশ্বরকে পরাজিত করে ত্রিহুত দখল করেন ইলিয়াস। দিল্লি-লখনৌতির কৌশলগত কারণে এই ত্রিহুত ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি গণ্ডক নদীরে তীরে হাজিপুর নামে এক শহর নির্মাণকাজে হাত দেন। ফিরোজ-বিন-রজব দিল্লির মসনদ সাজাতে ব্যস্ত থাকায় এদিকে নজর দিতে পারেননি। বিহারে দিল্লির প্রশাসক ইব্রাহিম বাইয়ু ইলিয়াসকে থামাতে এসে নিজের প্রাণ খোয়ান। টর্নেডোর বেগে ছুটতে থাকতে ইলিয়াস। পশ্চিমে এগিয়ে যাওয়ার সময় উত্তর প্রদেশের চম্পারন, গোরখপুর, বেনারস সবই করেন লণ্ডভণ্ড। ইচ্ছা ছিল এবার দিল্লির দিকে এগোবেন, কিন্তু তার পরামর্শদাতা তাকে বারণ করেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চোখে সিকান্দর শাহ;

বিহার অভিযান থেকে ফিরে তিনি ফখরউদ্দিনের ছেলে ইখতিয়ার উদ্দিনকে সুবর্ণগ্রামের সিংহাসন থেকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ফলে লখনৌতি-পান্ডুয়া-সপ্তগ্রাম-সুবর্ণগ্রাম এসে পড়ল তার ক্ষমতার ছায়াতলে। এই পুরো রাজ্যের নাম তিনি দিলেন বাঙ্গালা, নিজেকে ঘোষণা করলেন ‘শাহ-ই-বাঙ্গাল’ হিসেবে। তবে এই বাঙ্গালা বা বাংলা ছিল বঙ্গ থেকে আলাদা। তখন বঙ্গ ছিল এক জনপদের নাম, যা গড়ে উঠেছিল বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, নদীয়া অঞ্চল নিয়ে। বঙ্গসহ, হরিকেল, সমতট, রাঢ়, তাম্রলিপ্ত, চন্দ্রদ্বীপ, গৌড় নামক জনপদ ছিল এই বাংলার অংশ। পরবর্তীতে মোঘল শাসনামলে একে ‘সুবা-বাংলা’, ইংরেজ শাসনামলে একে বেঙ্গল নামে নামকরণ করা হয়।

ইলিয়াস শাহর সাম্রাজ্য;

ফিরোজ শাহ স্মরণে রেখেছিলেন ইলিয়াসের দুঃসাহসের কথা। বিষয়টি নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। ইলিয়াস শাহ যখন বিহার-উত্তর প্রদেশে নিজ রাজ্যের সীমানা বিস্তারে ব্যতিব্যস্ত, তখন (১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দের শীতকালে) ইলিয়াসকে শায়েস্তা করার জন্য তিনি নিজ সৈন্য-সামন্ত পরিচালনা করেন। গোরখপুর, ত্রিহুত হয়ে ফিরোজ শাহ বাংলার রাজধানী পাণ্ডুয়াতে পা রাখেন। আগেভাগেই বিপদ টের পাওয়ায় পাণ্ডুয়ায় অবস্থান না করে পূর্বদিকে সরে যান ইলিয়াস শাহ। আশ্রয় নেন একডালা দুর্গে।

একডালা দুর্গ;

পাণ্ডুয়া অধিগ্রহণের পর ফিরোজ শাহ বুঝলেন ইলিয়াস শাহ সেখানে আসেননি। তাই তিনি পৌঁছালেন একডালা দুর্গ পর্যন্ত। কিন্তু মুহুর্মুহু হামলার পরেও দুর্গভেদ করা সম্ভব হলো না তার পক্ষে। নাছোড়বান্দা ফিরোজ শাহ দীর্ঘ এক মাস অবরোধ করে রাখলেন অভেদ্য সে দুর্গ। পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল তীব্র গরম, খাদ্যাভাব, এবং মশার যন্ত্রণা। দিল্লির সুদক্ষ ঘোড়সওয়ারদের সাথে বাংলার পদাতিক সৈন্যদের টক্কর হলো সমানে সমানে। এই যুদ্ধে প্রাণ দেন ইলিয়াস শাহর পাইক-ই-মুকাদ্দম সহদেব। দিল্লির ইতিহাসবিদেরা অসমসাহসী এই বীরের নাম লিখে রেখেছিলেন স্বর্ণাক্ষরে।

ফিরোজ শাহের যুদ্ধবাহিনী;

এক মাস পার হবার পর হঠাৎ আকাশ ভেঙে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। ফিরোজ শাহর ঠাহর হলো, এভাবে একের পর এক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলে তাকে বহু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ইলিয়াস শাহ তাকে ধাওয়া করবেন, এই ভাবনায় পশ্চাদপসরণের ভান করে তিনি পিছিয়ে গেলেন কয়েক মাইল। কিন্তু কোনোপ্রকার ঝুঁকি নেননি দক্ষ যোদ্ধা ইলিয়াস। তিনি বুদ্ধি এঁটে একটি অগ্রবর্তী সেনাদল পাঠান। প্রেরিত সেই বাহিনী ফিরোজ শাহের সেনাদল দ্বারা কচুকাটা হলেও, ইলিয়াস শাহের মূল সেনাদল থাকে অক্ষত।

অনন্যোপায় হয়ে ফিরোজ শাহ ইলিয়াস শাহকে সন্ধির প্রস্তাব পাঠালে তাতে সম্মত হন ইলিয়াস শাহ। কারণ, বার্ধক্য ক্রমশই কাবু করে নিচ্ছিল ইলিয়াস শাহকে। যুদ্ধ-বিগ্রহ সামলানোর মতো এত প্রবল শক্তি আর দুর্দমনীয় ইচ্ছা; কোনোটাই আর অবশিষ্ট ছিল না শরীরে। ১৩৫৪ সালের বর্ষায় দিল্লিতে ফিরে যান ফিরোজ শাহ। বর্তমান দিল্লির ‘ফিরোজ শাহ কোটলা’ ক্রিকেট স্টেডিয়াম তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে।

১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে ফিরোজাবাদের পশ্চিম দ্বার;

আমৃত্যু রাজ্যের সীমানা বিস্তার এবং শাসনে মনোযোগী ছিলেন ইলিয়াস শাহ। যোগ্য একজন শাসক হিসেবে নিজ পারদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। মুসলিম সুফিসাধকদের প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল তার। আখি সিরাজউদ্দীন, আলাউল হক, রাজা বিয়াবানির মতো যশস্বী সুফিসাধকদের জন্য তিনি মসজিদ ও খানকাহ নির্মাণ করেছিলেন। বিচক্ষণ এই সুশাসক জানতেন, সালতানাতের রাজনৈতিক স্থায়িত্ব বৃদ্ধিকরণ এবং সুন্দরভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিমত উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তাই, বহু হিন্দু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি।

মুসলিম সুফিসাধকদের প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল ইলিয়াস শাহের;

পুরো ভারতবর্ষে বাংলার গুরুত্বকে জ্বলন্ত শিখার ন্যায় তুলে ধরেছিলেন শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ। বাংলার লোকেদের দিয়েছিলেন এক স্বতন্ত্র পরিচয়। ২ লাখ ৩২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এক অঞ্চলকে তিনি বেধে দিয়েছিলেন একক রাজনৈতিক ও জাতিগত পরিচয়ে। ১৩৫৮ সালে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর সিংহাসনে আসীন হন তাঁর সুযোগ্য সন্তান সিকান্দর শাহ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ধরনের আরো সংবাদ