মুনমুন সেন (জন্ম ২৮ মার্চ ১৯৫৪)[১] একজন বাঙালী ও ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, মারাঠি এবং কন্নড় ছবিতে অভিনয়ের জন্য পরিচিত। তিনি বলিউড সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাকে ৬০ টি চলচ্চিত্র এবং ৪০ টি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায়। তিনি ১৯৮৭ সালে সিরিভেন্নেলা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি অন্ধ্র প্রদেশের “নন্দী সেরা সহ-অভিনেত্রী পুরস্কার” অর্জন করেন।
মুনমুন সেন কলকাতার বিখ্যাত বাঙালী সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন এবং দিবানাথ সেনের কন্যা। তার বাবা দিবানাথ বালিগঞ্জ, কলকাতার অন্যতম সম্পদশালী ব্যবসায়ী আদিনাথ সেনের পুত্র। তার প্রপিতামহ দীননাথ সেন ত্রিপুরা মহারাজার দেওয়ান বা মন্ত্রী ছিলেন।
তিনি লরেটো কনভেন্ট, শিলং এবং লরেটো হাউজ, কলকাতায় পড়াশোনা করেন। ইংল্যান্ডের একটি স্কুল থেকে ফিরে আসার পর তিনি কলকাতার লরেটো কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন।
শিশু অবস্থায়, তিনি ভারতের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের কাছে অঙ্কন শিখেন। তিনি ছবি আকতে এবং দুষ্প্রাপ্য জিনিস সংগ্রহ করতে ভালবাসতেন। ২০০০ সালে এক সাক্ষাতকারে, তিনি বলেন, তিনি বালিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বছর শিক্ষকতা করেন এবং তারপর তিনি চিত্রাবাণি- একটি চলচ্চিত্র কৌশল শিক্ষালয়ে তিনি গ্রাফিক্স শিখান।[৪] এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন এমনকি তিনি একটি সন্তানের দত্তকগ্রহণ করেন, এবং তাকে বিয়ের আগে পর্যন্ত লালন পালন করেন।[২] সেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পূর্বে কলকাতার একটি পরিচিত বালক বিদ্যালয়ে (বালিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়) ইংরেজি পড়াতেন।
মুনমুন সেন তার অভিনয় জীবনের শুরু করেন বিয়ে এবং মা হবার পর। “অন্দর বাহার” (১৯৮৪) সিনেমায় তার অভিষেক ঘটে। তিনি অনেক বিতর্কিত চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যেম তার সাহসিকতার পরিচয় দেন।
তিনি রহস্য রোমাঞ্চ “১০০ ডেজ” (100 Days) (১৯৮৪) সিনেমাতেও মাধুরী দীক্ষিতের পাশাপাশি অভিনয় করেন। “যাক্ষি দিল” (১৯৯৪) সিনেমায় অভিনয়ের পর তিনি ২০০৩ সালে অসফল রোমাঞ্চ সিনেমা “কুচ তো হ্যায়” সিনেমায় অভিনয়ের পূর্বে আর কোন সিনেমায় অভিনয় করেন নি। যদিও তিনি তার মা সুচিত্রা সেনের মতন বিখ্যাত হতে পারেন নি। তিনি কিংবদন্তি পরিচালক কে.বিশ্বনাথ পরিচালিত তেলুগু সিনেমা “শিরিভেন্নালা” সিনেমায় অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্র শিল্পে আসার আগে এবং পরে, তিনি একা (অথবা তার কন্যার সাথে) কিছু পণ্যের মডেল হিসেবে কাজ করতেন। তার উল্লেখযোগ্য মডেলিং হল সাবানের বিজ্ঞাপন, যা ১৯৮০ সালে অনেক বিতর্কিত ছিল। টেলিভিশনে ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি তিনি, কিছু বাংলা টেলিফিল্মেও কাজ করেছেন।
তিনি বলেন যে সত্তর বছর বয়সে তিনি অভিনয়ে সাহসিকতা দেখাতে পারেন। তার মতে,
“Age is not important, the attitude is. Sophia is the ultimate glam girl who can manage to look beautiful in such a picture even now. But yes, India too has beautiful women like Rekha and Hema Malini who can carry such a thing out with aplomb. In fact, I wouldn’t mind myself if the shoot is done aesthetically and with taste.”
তিনি বর্তমানে কিছু সিনেমায় একসাথে কাজ করছেন।[৫] তিনি বাংলা একটি রান্নার বইও লিখেছেন, যা এখনো প্রকাশিত হয় নি। সাম্প্রতিককালে, তাকে কোন উপলক্ষে বিশেষ উপস্থিতি, অথবা তার পরিবারের সাথে, ভারতীয় সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা ৩ অংশে, সাধারণত পোলো খেলায় অথবা চলচ্চিত্র সংক্রান্ত অনুষ্ঠান অথবা কোন রেষ্টুরেন্টের উদ্বোধনে দেখা যায়।
মুনমুন সেন ১৯৭৮ সালে বিয়ে করেন, ত্রিপুরা স্টেটের রাজপরিবারের উত্তরাধীকারিকে। তিনি দুই কন্যার জননী, অভিনেত্রী রাইমা সেন এবং রিয়া সেন। তার অভিনয় জীবনে সার্বক্ষণিক উৎসাহ দেওয়ায় তিনি তার স্বামীর প্রতি অনেক আন্তরিকপূর্ণ।[৪]
তার স্বর্গীয় শাশুরী, ইলা দেবী, কুচবিহারের মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর ও মহারাণী ইন্দিরা দেবীর (বরদার রাজকন্যা) জ্যেষ্ঠা কন্যা, তিনি কুচ বিহারের যুবরাজ্ঞী ছিলেন এবং জয়পুরের মহারাণী গায়ত্রী দেবীর বড় বোন।

Leave a Reply