নার্গিস একটি ফুলের নাম। তবে – ‘আন্দাজ’, ‘মেলা’, ‘বরষাত’, ‘আওয়ারা’, ‘শ্রী ৪২০’, ‘লাহোর’, ‘যোগান’, ‘বাবুল’, ‘তকদির’, ‘হুমায়ুন’ – ছবিগুলো দেখে দেখে চিত্র নায়িকা নার্গিসকে খুব ভালো লেগে যায়।
সেই ভালো লাগা, সেই ভালোবাসা আজও ফুরিয়ে যায়নি। তাঁর ছবির পানে তাকিয়ে আজও যে তাঁর কথাটিই ভাবি। আর নার্গিস ফুল হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে স্পর্শ করি। কত ভালো লাগে নার্গিস আর নার্গিস ফুল।
নার্গিস মারা গেলেন ১৯৮১ সালের ৩ মে –
তখন তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশের পত্র পত্রিকায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দু’চার কথা লিখেও ছিলাম। সেই দিন তো আজ স্মৃতিময় ঘটনা।
নার্গিসের জন্ম ১৯২৯ সালের পহেলা জুন কলকাতায়। বাবা – মা ওর নাম রেখেছিলেন – ‘ফাতিমা কানিজ’।
আদর করে বাবা – মা ওকে ‘বেবি’ নামে ডাকতো।
পিতার নাম – উত্তম চাঁদ মোহন। মাতার নাম জদ্দন বাঈ।
জদ্দন বাঈ ছিলেন মুসলমান – যৌবনের শুরুতে জদ্দন বাঈ লখনৌর বাঈজী বাড়িতে নাচতেন – গাইতেন। উপস্থিত শেঠদেরকে দিতেন মনোরঞ্জন।
লখনৌ থেকে চলে আসেন কলকাতায়।
কয়েক বছর কলকাতায় থাকার পর জদ্দন বাঈ ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন বম্বেতে।
নায়িকা হিসেবে নার্গিসের জনপ্রিয়তা ছিলো ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত।
নায়িকা হিসেবে নার্গিস অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি –
১৯৩৫ সালে – তালাশে হক। এ ছবিতে নার্গিস ছিলেন শিশুশিল্পী। ছবির পরিচালক ছিলেন চিমনলাল লুহার। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন – ইয়াকুব খান, জদ্দন বাঈ, গুলজার ভাই, এ, আর, আকতার, আশিক হোসেন।
১৯৪৩ সালে – তকদির।
তকদির ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন মতিলাল। সহশিল্পীরা হলেন – জিল্লু, চন্দ্রমোহন, নূর মোহাম্মদ।
১৯৪৪ সালে – আনবান।
১৯৪৫ সালে – হুমায়ূন। হুমায়ূন ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন অশোক কুমার।
বিশভিন সাদি। নায়ক ছিলেন – মতিলাল। রামায়ণী ।
১৯৪৬ সালে – নার্গিস। মেহেন্দি।
নার্গিস ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রেহমান।
১৯৪৭ সালে – রোমিও জুলিয়েট।
১৯৪৮ সালে – আনোখা পেয়ার। মেলা। আঞ্জুমান। আগ।
আগ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর। সহশিল্পীরা হলেন – কামিনী কৌশল, নিগার সুলতানা, শশী কাপুর, প্রেম নাথ, কমল কাপুর।
মেলা ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার।
আনোখা পেয়ার ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার।
১৯৪৯ সালে – রুমাল। লাহোর। দারোগাজি। বরষাত। আন্দাজ।
বরষাত ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
আন্দাজ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার ও রাজ কাপুর।
লাহোর ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন করণ দেওয়ান।
১৯৫০ সালে – পেয়ার। মিনাবাজার। খেল। যোগন। জান পেহচান। বাবুল। আঁধি রাত।
বাবুল ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার। সহশিল্পীরা হলেন – মনোয়ার সুলতানা, জানকিদাস মেহরা, টুনটুন।
যোগন ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার।
পেয়ার ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
জান পেহচান ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
১৯৫১ সালে – সাগর। পেয়ার কি বাতে। হালচাল। দীদার। আওয়ারা।
আওয়ারা ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর। সহশিল্পীরা হলেন – পৃথ্বিরাজ কাপুর, হনি অবরীন, কে, এন, সিংহ, লীলা মিশ্র, বেবি জুবাইদা, শশী কাপুর, মানেক কাপুর।
দীদার ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন অশোক কুমার ও দিলীপ কুমার।
হালচাল ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন দিলীপ কুমার। সহশিল্পী হলেন বলরাজ সাহানি, ইয়াকুব খান, জীবন।
পেয়ার কি বাতে ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন ত্রিলোক কাপুর।
১৯৫২ সালে – বেওয়াফা। আনহোনি। অম্বর। আসিয়ানা।
আনহোনি ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
আসিয়ানা ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
১৯৫৩ সালে – পাপী। ধূন। আহ।
আহ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
অম্বর ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
বেওয়াফা ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
পাপী ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর।
১৯৫৪ সালে – আংগেরি।
আংগেরি ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন নাসির খান।
১৯৫৫ সালে – শ্রী ৪২০।
শ্রী ৪২০ ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর। সহশিল্পীরা হলেন – নাদিরা, ললিতা পাওয়ার, নানা পালিশকার, নিমো, হরি শিবদাসানী, ইফতেখার, শীলা ভাজ, টুনটুন, প্যাসি প্যাটেল।
১৯৫৬ সালে – জাগতে রহো। চোরি চোরি। পরদেশী।
চোরটি চোরি ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন রাজ কাপুর। সহশিল্পীরা হলেন জনি ওয়াকার, প্রাণ, ভগবান দাদা, ডেভিড আব্রাহাম চেউলকার, গোপ, রাজ মেহরা, মুকরি, রাজা সুলোচনা, ইন্দিরা বানসাই, আমীর বানু।
জাগতে রাহো ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – রাজ কাপুর, প্রদীপ কুমার, সুলোচনা চট্টোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল, স্মৃতিরেখা বিশ্বাস, সুমিত্রা দেবী।
১৯৫৭ সালে – মাদার ইন্ডিয়া। পরদেশী। মিস ইন্ডিয়া।
মাদার ইন্ডিয়া ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – রাজ কুমার, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার, কানাইয়ালাল, কুমকুম, জিল্লু, সাজিদ খান, মুকরি।
পরদেশী ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – বলরাজ সাহানি, পদ্মিনী, জয়রাজ, পৃথ্বিরাজ কাপুর।
মিস ইন্ডিয়া ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন প্রদীপ কুমার।
১৯৫৮ সালে – লাজওয়ান্তি । আদালত। ঘর সংসার।
আদালত ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – প্রদীপ কুমার, প্রাণ, ইয়াকুব খান, অচলা সচদেব, মুরাদ, জহর কাউল।
লাজওয়ান্তি ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – বলরাজ সাহানি, কুমারী নাজ, মনোরমা, মমতাজ বেগম, প্রভা দয়াল, পৃথ্বিরাজ কাপুর।
ঘর সংসার ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন রাজেন্দ্র কুমার, বলরাজ সাহানি, কুমকুম, জনি ওয়াকার।
১৯৫৯ সালে – আনাড়ি।
১৯৬৪ সালে – ইয়াদিন। ইয়াদিন ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন রাজ কাপুর, ওম প্রকাশ, আগা, বদ্রিপ্রসাদ, অচলা সচদেব, ডেভিড আব্রাহাম চেউলকার।
১৯৬৭ সালে – রাত আউর দিন।
রাত আউর দিন ছবিতে তাঁর সহশিল্পীরা হলেন – প্রদীপ কুমার, আনোয়ার হোসেন, লীলা মিশ্র, সত্যেন বোস, কে,এন, সিংহ, ফিরোজ খান, এস, এন ব্যানার্জি, সুলোচনা চট্টোপাধ্যায়, লক্ষ্মী ছায়া, অনুপ কুমার, রুবি মেয়ার্স।
নার্গিস মাত্র ৫ বছর বয়সে বেবি রাণী নামে তার মায়ের প্রযোজিত ‘তালাশ – এ – হক’ ছবিতে অভিনয় করেন। ওই ছবির নায়ক ছিলেন নার্গিসের বড় ভাই আখতার হোসেন।
ওই ছবিতে নার্গিসের ভূমিকা ছিল আদালতের দৃশ্যে দৌঁড়ে এসে বিচারকের হাতে ছোট একটা ডকুমেন্ট তুলে দেয় যা কিনা খুনি ব্যবহার করেছিল।
নার্গিস যে সকল নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তারা হলেন –
জয়রাজ। মতিলাল। রাজকাপুর। দিলীপ কুমার। করণ দেওয়ান। সপ্রু। অশোক কুমার।
নার্গিস অভিনীত শেষ ছবি ছিল ‘রাত আউর দিন’। ছবিটি ১৯৬৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল।
রাজ কাপুর আর নার্গিসের প্রেমকাহিনী তো অমর হয়ে রইলো।
নার্গিসের কবর বোম্বের মেরিন লাইনস বড় কবরস্থানে।
তাঁর সন্তানদের নাম – সঞ্জয় দত্ত, প্রিয়া দত্ত ও নম্রতা দত্ত।
নার্গিসকে নিয়ে আমার মনের গোপন কথা –
নার্গিস – নার্গিস – নার্গিস
তুমি একটি ফুল
প্রতিদিন তোমার সুঘ্রাণে
আমি পাই অসীম সাহস
তোমার ছবি হাতে নিয়ে বলি –
যদি দেখা হয় কোনদিন কোনকালে
আহা নার্গিস বনে –
রাখিব তোমার ঠোঁটে ঠোঁট
ভয় করিনা রাজ কাপুর কি সুনীলকে
আমিই বা কম কিসে
আমি তো নার্গিস প্রেমিক –
নার্গিসের স্পর্শ খুঁজি,
জনম জনম খুঁজিয়া বেড়াই
নার্গিস নামেরই সেই ফুলটিকে
আহা কত অপরূপা নার্গিস।
Leave a Reply